রিকশা খুইয়ে নিজেই চোর, সাত বছরে চুরি-ছিনতাই ৫০০

কাজের সন্ধানে ১৫ বছর আগে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন মো. কামাল হোসেন কমল। একদিন তার রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। এরপর নিজেই রিকশা চুরির চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গত সাত বছরে ৫০০টির বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছেন কামাল। এতে সর্বস্বান্ত হন গরিব-নিরীহ রিকশাচালক ও রিকশা মালিকরা।

 

রাজধানীর সবুজবাগ ও মুগদা থানা এলাকা থেকে আন্তঃজেলা চোরচক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চক্রের মূল হোতা মো. কামাল হোসেন কমল, মো. সাজু, মো. ফজলুল হক ও মো. শাহিন সরদার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ব্যাটারিচালিত ২৩টি অটোরিকশা, ১৮টি অটোরিকশার চার্জার ব্যাটারি, চারটি মোবাইল ফোন ও চারটি মাস্টার চাবি উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

 

তিনি বলেন, র‍্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে- রাজধানীর সবুজবাগ ও মুগদা থানাধীন এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভেতর সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ও ছিনতাই করা বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারিচালিত চোরাই এবং ছিনতাই করা রিকশা মজুত করে পরে রং পরিবর্তন করে বিক্রি করে আসছিল। বুধবার ভোরে ঐ এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

 

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, চক্রের মূল হোতা কামাল হোসেন। সে ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করে। একদিন তার রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। তারপর রিকশার মালিক তার কাছে থেকে চুরি যাওয়া রিকশার মূল্য আদায় করে। সে ধার করে ওই চুরি যাওয়া রিকশার মূল্য মালিককে পরিশোধ করে। ধারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সে চুরি যাওয়া রিকশা খুঁজতে থাকে। সে সময়ই অপরাধ জগতের সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর নিজেই রিকশা চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে আসছে চক্রটি।

 

র‍্যাব বলছে, কামাল হোসেন প্রথমে নিজেই একা রিকশা চুরি করতো। সে নতুন রিকশায় উঠে রিকশাচালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিয়ে চালককে অজ্ঞান করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতো। আবার কখনো রিকশাচালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভেজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করতো। এরপর কমল রিকশা চুরির জন্য একটি চক্র গড়ে তোলে।

 

এক সময় এসব চুরি যাওয়া রিকশা শাহীন, আকবর, মনির এবং বাবলুর গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখতো। পরে রিকশার মালিককে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করতো। মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করা হতো। এরপর একটি অজ্ঞাতস্থানে রিকশা রেখে রিকশার মালিককে রিকশা নিয়ে যেতে বলতো। এ কৌশলে রিকশা চুরি করার পর সে তার সহযোগীসহ একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়।

 

পরবর্তীসময়ে চুরির কৌশল পরিবর্তন করে কামাল। সে ও তার সহযোগীরা বেশি ভাড়ায় কোনো রিকশায় উঠে রিকশা চালককে নির্জন স্থানে নিয়ে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতো। চুরি করা রিকশাগুলোর রং পাল্টে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিতো। এসব রিকশা পাঁচ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো।

 

র‌্যাব আরও জানায়, কখনো রিকশার মোটর পার্টস খুলে আলাদা আলাদাভাবে বিক্রি করা হতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে গাড়ি চুরি, চোরাই গাড়ি নিরাপদ হেফাজতে রাখা, চোরাই গাড়ি বিক্রি ইত্যাদি কাজে কামাল হোসেন বিভিন্ন সময় কৌশল পরিবর্তন করতো। গ্রেফতার এ চক্রের সবাই রিকশা চালনায় পারদর্শী।

 

গ্রেফতার কামালের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাতটি চুরির মামলা এবং ফজলুল হকের নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার শাহিনের মান্ডা খালপাড় এলাকায় রিকশা গ্যারেজ রয়েছে। সে ৩০ বছর ধরে এ রিকশা গ্যারেজ পরিচালনা করে আসছে। চোরচক্রের সঙ্গে তারও সাত বছর আগে পরিচয়। বেশি লাভের আশায় সে রিকশা চোরচক্রকে তার গ্যারেজ ব্যবহার করে চোরাই রিকশা বিক্রি ও নিরাপদ হেফাজতে রাখতে সহায়তা করতো। গাড়ি বিক্রির টাকা থেকে সে ১০ শতাংশ কমিশন নিতো।

 

গ্রেফতাররা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন গ্যারেজকে নিরাপদ স্থান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছিল। আসামিদের এরূপ কার্যকলাপের ফলে গরিব ও নিরীহ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও মালিকদের অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

 

চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের ফলে ভুক্তভোগীদের মনে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ওয়ারী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দুজন আহত

» পান ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা

» বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে যুবকের মৃত্যু

» ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার

» শাহরুখের পরকীয়ার জেরে মান্নাত ছেড়ে বাপের বাড়িতে গৌরী!

» সাকিবের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, অধিনায়ক হয়ে জানালেন মিরাজ

» যমুনা সেতু পশ্চিম পাড়ে ৪ কিলোমিটার যানজট

» আমেরিকায় তৈরি পিস্তলসহ দুই জন আটক

» হজ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন ১২ হাজার ৮৭৭ হাজি

» গরিবের টাকায় দশ মাসে ১১ বার বিশ্বভ্রমণ করেছেন ড. ইউনূস : গোলাম মাওলা রনি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রিকশা খুইয়ে নিজেই চোর, সাত বছরে চুরি-ছিনতাই ৫০০

কাজের সন্ধানে ১৫ বছর আগে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন মো. কামাল হোসেন কমল। একদিন তার রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। এরপর নিজেই রিকশা চুরির চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গত সাত বছরে ৫০০টির বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছেন কামাল। এতে সর্বস্বান্ত হন গরিব-নিরীহ রিকশাচালক ও রিকশা মালিকরা।

 

রাজধানীর সবুজবাগ ও মুগদা থানা এলাকা থেকে আন্তঃজেলা চোরচক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চক্রের মূল হোতা মো. কামাল হোসেন কমল, মো. সাজু, মো. ফজলুল হক ও মো. শাহিন সরদার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ব্যাটারিচালিত ২৩টি অটোরিকশা, ১৮টি অটোরিকশার চার্জার ব্যাটারি, চারটি মোবাইল ফোন ও চারটি মাস্টার চাবি উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

 

তিনি বলেন, র‍্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে- রাজধানীর সবুজবাগ ও মুগদা থানাধীন এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভেতর সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ও ছিনতাই করা বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারিচালিত চোরাই এবং ছিনতাই করা রিকশা মজুত করে পরে রং পরিবর্তন করে বিক্রি করে আসছিল। বুধবার ভোরে ঐ এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

 

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, চক্রের মূল হোতা কামাল হোসেন। সে ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করে। একদিন তার রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। তারপর রিকশার মালিক তার কাছে থেকে চুরি যাওয়া রিকশার মূল্য আদায় করে। সে ধার করে ওই চুরি যাওয়া রিকশার মূল্য মালিককে পরিশোধ করে। ধারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সে চুরি যাওয়া রিকশা খুঁজতে থাকে। সে সময়ই অপরাধ জগতের সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর নিজেই রিকশা চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে আসছে চক্রটি।

 

র‍্যাব বলছে, কামাল হোসেন প্রথমে নিজেই একা রিকশা চুরি করতো। সে নতুন রিকশায় উঠে রিকশাচালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিয়ে চালককে অজ্ঞান করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতো। আবার কখনো রিকশাচালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভেজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করতো। এরপর কমল রিকশা চুরির জন্য একটি চক্র গড়ে তোলে।

 

এক সময় এসব চুরি যাওয়া রিকশা শাহীন, আকবর, মনির এবং বাবলুর গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখতো। পরে রিকশার মালিককে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করতো। মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করা হতো। এরপর একটি অজ্ঞাতস্থানে রিকশা রেখে রিকশার মালিককে রিকশা নিয়ে যেতে বলতো। এ কৌশলে রিকশা চুরি করার পর সে তার সহযোগীসহ একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়।

 

পরবর্তীসময়ে চুরির কৌশল পরিবর্তন করে কামাল। সে ও তার সহযোগীরা বেশি ভাড়ায় কোনো রিকশায় উঠে রিকশা চালককে নির্জন স্থানে নিয়ে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতো। চুরি করা রিকশাগুলোর রং পাল্টে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিতো। এসব রিকশা পাঁচ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো।

 

র‌্যাব আরও জানায়, কখনো রিকশার মোটর পার্টস খুলে আলাদা আলাদাভাবে বিক্রি করা হতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে গাড়ি চুরি, চোরাই গাড়ি নিরাপদ হেফাজতে রাখা, চোরাই গাড়ি বিক্রি ইত্যাদি কাজে কামাল হোসেন বিভিন্ন সময় কৌশল পরিবর্তন করতো। গ্রেফতার এ চক্রের সবাই রিকশা চালনায় পারদর্শী।

 

গ্রেফতার কামালের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাতটি চুরির মামলা এবং ফজলুল হকের নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার শাহিনের মান্ডা খালপাড় এলাকায় রিকশা গ্যারেজ রয়েছে। সে ৩০ বছর ধরে এ রিকশা গ্যারেজ পরিচালনা করে আসছে। চোরচক্রের সঙ্গে তারও সাত বছর আগে পরিচয়। বেশি লাভের আশায় সে রিকশা চোরচক্রকে তার গ্যারেজ ব্যবহার করে চোরাই রিকশা বিক্রি ও নিরাপদ হেফাজতে রাখতে সহায়তা করতো। গাড়ি বিক্রির টাকা থেকে সে ১০ শতাংশ কমিশন নিতো।

 

গ্রেফতাররা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন গ্যারেজকে নিরাপদ স্থান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছিল। আসামিদের এরূপ কার্যকলাপের ফলে গরিব ও নিরীহ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও মালিকদের অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

 

চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের ফলে ভুক্তভোগীদের মনে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com